মুদ্রা ডেস্ক : লীগ ও বিএনপির পরস্পরবিরোধী অবস্থান জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘সংশয়’, ‘সংকট’ ও ‘অনিশ্চয়তা’ সৃষ্টি করেছে। একটি বড় দল বলছে নির্বাচনে অংশ নেবে না। আরেকটি দল বলছে নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে সংকটে পড়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সোমবার সংলাপের দ্বিতীয় দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সিইসি বলেন, প্রধানতম দল অংশ না নিলে নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন। রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করে সিইসি বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের ইস্যুতে সংবিধান কোনো বাঁধা নয়। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে। বিরোধী দল যেটা চাইছেন, সরকারি দল যা বলছেন-এটা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য বসা দরকার। তবে নির্বাচনের নামে নাটক মঞ্চস্থ করতে চান না বলেও জানান সিইসি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানান সিইসি। সোমবার নির্ধারিত চারটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি অংশ নেয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চারজন কমিশনার এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা শুরু হয়ে নির্ধারিত বিরতি দিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সংলাপ চলে। সংলাপের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ নিয়ে জবাব দেন সিইসি। একাধিক দিনে ভোটগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতামতও জানতে চান তিনি। সংলাপের এক পর্যায়ে সিইসিকে অনেকটা ক্লান্ত দেখা যায়।
বিকালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচন ধ্বংসের অভিযোগের এক পর্যায়ে সিইসি অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচনব্যবস্থা, রাজনীতিসহ অনেক কিছু পচে গেছে। আমাকে অস্ট্রেলিয়া বা বিলেতের নির্বাচন কমিশনার করে দেন কত সহজেই নির্বাচন করে দেব। এখানে নির্বাচন করা অনেক কঠিন কাজ। রাজনীতিতে অর্থশক্তি আছে-সেটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব। ওই সংলাপে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, প্রধানতম দল অংশ না নিলে নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন। সিইসি বলেন, বিএনপির ইচ্ছার পক্ষে-বিপক্ষে কমিশনের কোনো বক্তব্য নেই। বিদ্যমান কাঠামোতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কমিশন এগিয়ে যাবে।
এর আগে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, আমরাও মনে করি বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। নির্বাচন হয়তো আমরা করব। আবার বিএনপি যেভাবে নির্বাচন করতে চাচ্ছে সেটা যদি অন্যান্য দল বিশেষ করে শাসক দলের সঙ্গে বসে সুরাহা করতে পারে, একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে সেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা এখনো পাচ্ছি না। ওই অবস্থা এখনো আসেনি। আলটিমেটলি বিএনপি কী নির্বাচনে আসছে, তা নিয়ে এখনো একটি সংশয় দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি। সিইসি বলেন, গণমাধ্যম থেকে জেনেছি বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের নিজস্ব কিছু কর্মসূচি আছে নির্বাচনকালীন সরকার থাকতে হবে। এরকম কিছু পরিবর্তন না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না। এটাও কিন্তু একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। একটি সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। তবে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে কেউ বাধা দিলে কমিশন আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
সংলাপে কয়েকটি দল সংসদ ভেঙে ও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে রাখার প্রস্তাব করে। নির্বাচনকালীন সংসদ ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে সিইসি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা কিছুই বলব না, কিছুই করব না। আপনারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আনতে সংবিধান সংশোধন লাগবে। সেটা বড় কথা নয়, সবই সম্ভব, যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়। আপনারা সেটা আপনাদের মধ্যে আলোচনা করতে পারেন। দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ আমাদের সঙ্গে যে সংলাপ করছেন, এর চেয়ে বেশি উপকার হতো যদি আপনারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করতেন।
অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামার ব্যাখ্যা দিলেন সিইসি : কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে সিইসির আগের দিনের পরামর্শের সমালোচনা করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, এটা কী অস্ত্রবাজি বা মল্লযুদ্ধের জায়গা? নিশ্চয়ই সে জায়গা নয়। জবাবে সিইসি জানান, তিনি মন থেকে ওই বক্তব্য দেননি। আলোচনার প্রসঙ্গক্রমে তিনি কৌতুক করে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে কথাটি বলেছেন। তিনি বলেন, এটা কী কখনো মিন করা হয়! একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটুকু জ্ঞান নেই? এই কথাটি সত্য হলে আমি তো আর্মস অ্যাক্টে লায়াবল। পুলিশ আমাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাবে। বুঝতে হবে এটা অন্তর থেকে বলা হয়েছে না কৌতুক করে বলা হয়েছে। দেশের পেপারগুলোতে এটা প্রধান খবর। একটি মানুষকে নামিয়ে দেয়া। এরপর তো আর কাজ করার মনোবলও থাকে না। ইচ্ছেও করে না। আজকে যে অবস্থা। আজকে যদি বিদায় হতে পারতাম ভালো লাগত।
পদত্যাগে প্রস্তুত : ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করার মানসিকতা রাখার পরামর্শ দেন সাইফুল হক। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, পদত্যাগ করতে দেরি হবে না। যখন বিএনপি বলল আমাদের ওপর আস্থার কোনো প্রশ্ন আসে না। আমরা সুবিধাভোগী। সরকার পরিবর্তন হবে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। আমাদের কথা হলো এটা নিয়ে আমরা মোটেও আতঙ্কিত নই। বিএনপির ইচ্ছার পক্ষে-বিপক্ষে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। বিদ্যমান কাঠামোর অধীনে আমরা সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাব।
Leave a Reply